ঢাকাসোমবার , ৩০ জুন ২০২৫
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আইন ও আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. খেলাধুলা
  7. ধর্ম
  8. নারী ও শিশু
  9. বিনোদন
  10. মি‌ডিয়া
  11. মু‌ক্তিযুদ্ধ
  12. রাজধানী
  13. রাজনীতি
  14. শিক্ষা
  15. শিল্প ও সা‌হিত‌্য

শ্রমের সা‌থে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নীতি সহায়তা আদা‌য়ে নারীর ভু‌মিকা চাই : ভি‌দিয়া অমৃত খান

বার্তা কক্ষ
জুন ৩০, ২০২৫ ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

‌ডি এস মাহফুজা হো‌সেন মিতা ::

দেশের তৈরি পোশাকশিল্প খা‌তের শুরু থেকেই নারী শ্রমিকরা অবদান রে‌খে আস‌ছে। কিন্তু এত বছরের পরও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় অথবা নী‌তি সহায়তা আদা‌য়ের ক্ষে‌ত্রে তাদের অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিত। এই বৈষম্য দূর করতে হ‌লে এব্ং নারী কর্মীদের ব‌্যাং‌কিং সু‌বিধাসহ নী‌তিসহায়তা সু‌বিধা আদা‌য়ে ভু‌মিতা রাখ‌তে হ‌বে। আর এ জন‌্য উচ্চপর্যায়ের পদে উন্নীত করার এখনই সময়। এ শিল্পের বিকাশে নারীরাই মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছেন। এখন সময় এসেছে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় নিয়ে আসার।

নেতৃত্বে নারীর সমান অংশীদারত্ব নিশ্চিত না হলে এ খাতের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।বিাজএমইএ সহ সভাপ‌তি ব‌্যা‌রিষ্টার ভি‌দিয়া অমৃত খান ব‌লেন, আমি চাই নারী শ্রমিকরা ম্যানেজমেন্ট লেবেলে আসুক, তারা নেতৃত্ব দিক।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রথম নারী সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার ভিদিয়া অমৃত খান – এবি‌সি টি‌ভি , দৈ‌নিক মুক্ত বাংলা‌ ও চলমান দেশ‌ এর সা‌থে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন চলমান তেশ এর ব‌্যবস্থাপনা সম্পাদক এবি‌সি টি‌ভির বিশেষ সংবাদদাতা ডি এস মাহফুজা হো‌সেন মিতা।

ভিদিয়া অমৃত খান বলেন, নারী শ্রমিকদের অগ্রগতিতে আমি বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ বিজিএমইএর বোর্ডের কাছে উপস্থাপন করবো এবং আশা করি সবাই সমস্বরে সেটা গ্রহন কর‌বে।

ভিদিয়া অমৃত খানের বাবা মরহুম এম. নূরুল কাদির খান, বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের পথপ্রদর্শক। তিনি ১৯৭৮ সালে দেশের প্রথম শতভাগ-রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস দেশ গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রথমবারের মতো বিজিএমইএতে আপনারা পাঁচজন নারী পরিচালক হয়েছেন এবং আপনি সহ-সভাপতি। এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবা‌বে ভিদিয়া অমৃত খান ব‌লেন :

আমি মনে করি এটা আমার দীর্ঘ পরিশ্রম ও অভিজ্ঞতার স্বীকৃতি। বিজিএমইএর আশপাশে আমি প্রায় ১৫ বছর কাজ করেছি। আমার প্রথম নির্বাচন ছিল ২০১১ সালে। এতদিনে আমি বোঝাতে পেরেছি যে আমি শুধু নামেই প্রার্থী নই, বাস্তবে কাজ করি। এবার পাঁচজন নারী বিজয়ী হয়েছেন, যা একটি ঐতিহাসিক রেকর্ড। আমি মনে করি, এটা আমাদের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে একটি বড় ধাপ।

এই (পোশাক) খাতটি নারী শ্রমিকনির্ভর। একসময় প্রায় ৮০ শতাংশ শ্রমিকই ছিলেন নারী, এখন তা ৬৫ শতাংশের মতো। তাই নেতৃত্বেও নারীদের থাকা জরুরি। এটা শুধু প্রতীকী কিছু নয়। কাজের ক্ষেত্রেও নারীরা প্রমাণ দিচ্ছেন যে তারা আন্তরিক, দক্ষ এবং দায়িত্বশীল।

আপনি কী ধরনের পরিবর্তন আনতে চান, বিশেষ করে শ্রমিকদের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে? এমন প্রশ্নের জবা‌বে ভিদিয়া অমৃত খান ব‌লেন:

শুধু একা আমি না—আমাদের সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে। নারী কর্মীদের জন্য আরও ম্যানেজমেন্ট পর্যায়ে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। আমি চাই, তারা সুপারভাইজার, মিড ও টপ ম্যানেজমেন্টে আসুক। তারা টেকনিক্যাল বিষয়গুলো বুঝে এবং দায়িত্বশীলভাবে কাজ করুক।

আমি আগে থেকেই এমন কিছু প্রকল্পে কাজ করেছি যেখানে গার্মেন্টস বর্জ্য শিল্পে নারীরা যুক্ত ছিলেন। আমরা ‘সুইট টু সিটি’ প্রকল্পে কাজ করেছি, যেখানে পরিবেশ, শ্রমিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেছি। অটোমেশন আসছে, নারীদেরও সেই অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দিতে হবে। স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে কাজ করতে চাই। শ্রমিকদের বাচ্চাদের জন্য স্কুল গড়ার পরিকল্পনা আছে—সরকার যদি সাহায্য করে তবে তা আরও দ্রুত হবে।

সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্তরে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে পোশাক খাতের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব নয়। শুধু শ্রম নয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণেও নারীকে এগিয়ে আসতে হবে। 

এই পাঁচজন নারী উদ্যোক্তার বিজয় কি পুরুষ নেতৃত্বের মধ্যে মানসিকতার পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় ? এমন প্রশ্নের জবা‌বে, ভিদিয়া অমৃত খান ব‌লেন :

অবশ্যই। এই ভোট দিয়েছেন গার্মেন্টস মালিকরাই। তারা বুঝেছেন, এখন সময় এসেছে নারী নেতৃত্বকে সামনে নিয়ে আসার। আমাদের অনেকেই নিজেদের প্রতিষ্ঠানে প্রধান হিসেবে কাজ করছি, কেউ বাবার ব্যবসা চালাচ্ছি, কেউ নিজের তৈরি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি। আমরা কারও ওপর নির্ভরশীল নই, বরং নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, নেতৃত্ব দিচ্ছি। বৈশ্বিক ক্রেতাদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আপনি কী বার্তা দিতে চান ? এমন প্রশ্নের জবাব ভিদিয়া অমৃত খান ব‌লেন।

বৈশ্বিক ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে বলব—তোমরা কমপ্লায়েন্স চাও, অথচ প্রাইস কমাও! ফ্রিতে কিছুই হয় না। কমপ্লায়েন্স বজায় রাখতে খরচ হয়, ট্রেনিং লাগে, এনভায়রনমেন্টাল মান রাখতে ইনভেস্ট করতে হয়। তাই বায়ারদের উচিত আমাদের সাপোর্ট করা। আমরা গ্রিন ফ্যাক্টরি বানাচ্ছি, সার্কুলারটি আনছি, রিসাইক্লিং করছি—এসব টেকসই উদ্যোগের পেছনে তোমাদেরও দায়িত্ব আছে।

একজন নারী নেত্রী হি‌সে‌বে  আপনার নারী শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে কি বার্তা দে‌বেন ? এ বিষ‌য়ে ভিদিয়া অমৃত খান ব‌লেন।

আমি বলব, আপনারা অসাধারণ। আপনারা এ শিল্পের মূল ভিত্তি, আপনাদের ছাড়া এ খাত চলতে পারে না। সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করেন। অনেকেই নিজের সন্তানকে ফেলে, একা থেকে কাজ করেন। আমি চাই, আপনাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও খোলামেলা হোক। আমি এমন উদ্যোগ নিতে চাই যাতে ওয়ার্কারদের সন্তানদের পড়াশোনার সুযোগ তৈরি হয়। স্কুল করা যায় যাতে তারা মানসম্মত শিক্ষা পায়। শিক্ষাই পারে প্রজন্ম বদলে দিতে।

তাই কেবল শ্রম নয়, এখন সময় এসেছে নেতৃত্বেও নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করার। নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হোন, নিজের কণ্ঠস্বর তুলে ধরুন। কর্মক্ষেত্রে সম্মান, ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ পরিবেশ—এ সবই আপনাদের প্রাপ্য, অনুগ্রহ নয়। আমি চাই প্রতিটি নারী শ্রমিক নিজের সক্ষমতাকে বিশ্বাস করুক এবং আগামী দিনে নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত হোক। নারী এগোলে সমাজ এগোয়, শিল্পও এগোয়।

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য তার ভাবনা‌কে ভিদিয়া অমৃত খান উপস্থাপন ক‌রেন।

নারী উদ্যোক্তারা এখনো ব্যাংকিং সিস্টেমে পিছিয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিমেল ফান্ড থাকলেও খুব কম সংখ্যক আবেদনকারীর লোন পাস হয়। কারণ আজও একজন নারীকে লোন নিতে হলে জামাই বা ভাইকে গ্যারান্টার বানাতে হয়। কেন? আমি কেন আমার মা, বোন বা ফ্রেন্ডকে গ্যারান্টার বানাতে পারবো না? নারী উদ্যোক্তাদের জন্য স্পেশাল ইন্টারেস্ট রেট, স্পেশাল ব্যাংকিংসেবা দরকার।

একজন নারী উদ্যোক্তা যদি ১০ মিলিয়ন ডলারের এক্সপোর্ট করতে পারে, তবে তার স্পেশাল কিছু না লাগলেও, যারা শুরু করছে তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা থাকা উচিত। এই ‘তুমি তো মেয়েমানুষ’—এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। আমি ছোটবেলায় বোর্ডিং স্কুলে পড়েছি, বাবার কাছ থেকে কখনো ফিমেল বলে কম কিছু পাইনি। এমন শিক্ষাই দরকার, যাতে মেয়েরা নিজের অবস্থান নিজেই তৈরি করতে পারে।

সব‌শে‌ষে বল‌লো নি‌জে‌দের ক‌ন‌ফি‌ডেন্ট লে‌ভেল বাড়া‌তে হ‌বে। এগি‌য়ে নেবার মান‌ষিকতা তৈ‌রি কর‌তে হ‌বে।

ভি‌দিয়া অমৃত খান আপনা‌কে ধন‌্যবাদ আপনার শত ব‌্যস্ততার ম‌ধ্যে আপনার মুল‌্যবাণ সময় দেয়ার জন‌্য।

আপনা‌দের‌কে ধণ‌্যবাদ আমা‌কে আমা‌দের নারী উদ্যোক্তা বন্ধু, সহকর্মী ও সর্বপ‌রি নারী শ্রমিক‌দের নি‌য়ে আমার ভাবনা গু‌লো‌কে প্রকাশ সু‌যোগ ক‌রে দেবার জন‌্য।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি