নিজস্ব প্রতিবেদক ::
পাসপোর্ট অফিসে দুর্নৗতিবাজ হিসেবে কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন যে, অধিদফতরের মহাপরিচালক থেকে শুরু করে অন্যান্য সব কর্মকর্তাই তটস্থ থাকতেন। ঘুষ, দুর্নীতি, নিয়োগ এমনকি পদোন্নতি বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন তিনি।
আর এসব কারণে বিগত সরকারের সময়েই দুদক তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এমনকি অধিদফতর থেকে চাকরিচ্যুতির আবেদনও করা হয় মন্ত্রণালয়ে। এত কিছুর পরও সে বহাল তবিয়তে আছে। পাসপোর্টের আলোচিত এই কর্মকর্তার অপকর্মের সহযোগি হরলন পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক (ডাটা অ্যান্ড পারসোনালাইজেশন সেন্টার) তৌফিকুল ইসলাম খান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক সাইদুল ইসলাম।
পাসপোর্ট অধিদফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বিগত সময়ে সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, ডিবির হারুন অর রশিদ, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজের ভাইসহ যত বিতর্কিত পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছে, এর সঙ্গে এই তিন কর্মকর্তা জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। যা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই করা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পাসপোর্টের ঢাকা বিভাগীয় অফিসের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন যেন অপ্রতিরোধ্য ছিলেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের আস্থাভাজন ও সাবেক আইজি বেনজির আহমেদের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে নিয়ম নীতি, সিনিয়র জুনিয়র এমনকি কার সঙ্গে কী ব্যবহার করতে হবে, সব কিছুই তুচ্ছ ছিল তার কাছে। সরকারি এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এতটাই প্রভাবশালী যে মহাপরিচালকের সামনে তার কোনও আদেশ না মানার ঘোষণা দেন, অতিরিক্ত মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন। তার ভয়ে শুধু তার অফিস নয়, প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা পর্যন্ত অতিষ্ঠ থাকতেন। অথচ এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকে মামলা চলমান, ইতোমধ্যে চার্জশিটও হয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে অন্তত ১৫ ধরনের গুরুতর অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। অধিদফতর থেকে তাকে চাকরিচ্যুতির আবেদন করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করা আবেদনে আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি অধিদফতরের ত্রৈমাসিক সভায় রীতিনীতি ভঙ্গ করে নিজে মাইক নিয়ে উচ্চস্বরে হৈচৈ শুরু করেন। মাল্টিপল অ্যাকটিভ পাসপোর্টে গোয়েন্দা প্রতিবেদন আবশ্যকতার বিষয়ে মহাপরিচালকের নির্দেশনার সমালোচনা করে বক্তব্য দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আমরা পরিচালকের কোনও আদেশ মানবো না। মন্ত্রণালয়ের আদেশ মানবো।’ এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অধিদফতর তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয়। কিন্তু তার জবাবে অধিদফতর সন্তুষ্ট না হয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে। বর্তমানে এ বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। গত ২৯ জুলাই তাকে ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস থেকে সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে বদলি করা হয়।
আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকে মামলা চলমান। এছাড়া বেনজির আহমেদকে অবৈধ পাসপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলারও আসামি তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুনের বক্তব্য জানতে বিভিন্নভাবে যোগোযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। এমনকি মোবাইলে মেসেজ পাঠালেও কোনও উত্তর দেননি।